বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শাড়িগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল শাড়ি অন্যতম। এর বুনন, ডিজাইন, আরামদায়কতা এবং সৌন্দর্যের কারণে এটি দেশজুড়ে জনপ্রিয়। মূলত টাঙ্গাইল জেলার তাঁতশিল্পীরা এই শাড়ি তৈরি করেন, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব টাঙ্গাইল শাড়ির পাইকারি বাজার সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক-
টাঙ্গাইল শাড়ির বৈশিষ্ট্য
টাঙ্গাইল শাড়ির কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। আর এই বৈশিষ্ট্য গুলোর কারণেই এই শাড়ি পড়তে সবাই পছন্দ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক টাঙ্গাইল শাড়ির বৈশিষ্ট্য-
হালকা এবং নরম কাপড়
হাতের কাজের বর্ডার এবং নকশা
তুলার সুতা, সিল্ক এবং হাফসিল্কের মিশ্রণে তৈরি
বিভিন্ন উজ্জ্বল ও মৃদু রঙের সমন্বয়
ডিজাইনে আধুনিকতার ছোঁয়া
টাঙ্গাইল শাড়ির প্রধান পাইকারি বাজার
টাঙ্গাইলের শাড়ির পাইকারি বাজার মূলত ঘাটাইল, করটিয়া, ও নাগরপুরসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থিত। তবে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারটি টাঙ্গাইল সদরের করটিয়া এলাকায় অবস্থিত। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসেন শাড়ি কিনতে।
১. করটিয়া পাইকারি বাজার
করটিয়া বাজার টাঙ্গাইলের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার। এখানে সপ্তাহে নির্দিষ্ট কিছু দিনে পাইকারি কেনাবেচা বেশি হয়। বিশেষ করে মঙ্গলবার এবং শুক্রবার সবচেয়ে ব্যস্ত দিন। এখানে বিভিন্ন ধরনের তাঁতের দোকান, শোরুম এবং আড়ত রয়েছে যেখানে কম দামে শাড়ি কেনা যায়।
২. টাঙ্গাইল সদর বাজার
এখানে ছোট-বড় বিভিন্ন তাঁতশিল্পীদের দোকান আছে। তাঁতিরা সরাসরি এখানে তাঁদের তৈরি শাড়ি বিক্রি করেন। বড় বড় পাইকাররা এখান থেকে অর্ডার দিয়ে শাড়ি নেন।
৩. কালিহাতী ও ভূঞাপুরের তাঁত বাজার
এই দুই স্থানে বেশ কিছু ছোট তাঁতশিল্পী আছেন, যারা পাইকারদের চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করেন। অল্প দামে মানসম্মত শাড়ি পাওয়া যায়।
পাইকারি শাড়ি কেনার সুবিধা
পাইকারি শাড়ি কিনলে আপনি বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে পাইকারি শাড়ি কিনলে আপনার জন্য লাভ হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাইকারি শাড়ি কেনার সুবিধা-
খুচরা দামের চেয়ে অনেক কম দামে শাড়ি কেনা যায়।
সরাসরি তাঁতিদের কাছ থেকে কেনার সুযোগ থাকে।
বিভিন্ন ডিজাইন ও কাপড়ের বৈচিত্র্য পাওয়া যায়।
অনলাইন ব্যবসার জন্য সহজে স্টক সংগ্রহ করা যায়।
পাইকারি দামে শাড়ি কেনার প্রক্রিয়া
অনেকেই পাইকারি শাড়ি কিনতে পারেনা। পাইকারি শাড়ি কেনার কিছু প্রক্রিয়া আছে। যেমন-
বাজারে গিয়ে সরাসরি বিভিন্ন দোকান থেকে শাড়ি দেখা ও দাম যাচাই করা।
বড় পরিমাণে কিনলে আরও ছাড় পাওয়া যায়।
পরিচিত বা বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া ভালো।
কেউ যদি ঢাকাসহ অন্য জেলা থেকে নিতে চান, তাহলে অনলাইনে যোগাযোগ করেও অর্ডার করা যায়।
টাঙ্গাইল শাড়ির দাম
টাঙ্গাইল শাড়ির দাম নির্ভর করে কাপড়, বুনন, ডিজাইন ও শাড়ির মানের ওপর। সাধারণত পাইকারি বাজারে দাম নিম্নরূপ:
তুলার শাড়ি: ৫০০ - ১২০০ টাকা
হাফ সিল্ক শাড়ি: ১০০০ - ২০০০ টাকা
পূর্ণ সিল্ক শাড়ি: ২০০০ - ৫০০০ টাকা বা তার বেশি
পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য পরামর্শ
বিশ্বস্ত বিক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন।
একবারে বেশি পরিমাণ শাড়ি কিনলে দাম কমে যায়।
অনলাইনে বিক্রি বাড়াতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন।
বিশেষ উৎসবের সময় বেশি স্টক রাখুন, কারণ তখন চাহিদা বেড়ে যায়।
উপসংহার:টাঙ্গাইল শাড়ির পাইকারি বাজার শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, সাধারণ ক্রেতাদের জন্যও লাভজনক হতে পারে। কম দামে ভালো মানের শাড়ি পাওয়ার জন্য এই বাজারগুলোর ওপর নির্ভর করা যায়। যদি কেউ টাঙ্গাইল শাড়ির পাইকারি ব্যবসা করতে চান, তাহলে অবশ্যই সরাসরি এই বাজারগুলো পরিদর্শন করা উচিত।