ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। যুগে যুগে এটি বিভিন্ন শাসকের অধীনে থেকেছে এবং বর্তমানে এটি এক জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ফিলিস্তিনের আয়তন, সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক বিতর্ক রয়েছে।
ফিলিস্তিনের আয়তন কত
ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত একটি ভূখণ্ড, যার আয়তন প্রায় ৬,০২০ বর্গকিলোমিটার। এটি প্রধানত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে গঠিত। পশ্চিম তীরের আয়তন প্রায় ৫,৬৪০ বর্গকিলোমিটার এবং গাজার আয়তন প্রায় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। ফিলিস্তিন অঞ্চলটি ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে এই ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ ইসরায়েলের দখলে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে একটি বিতর্কিত বিষয়। ফিলিস্তিনি জনগণ স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে। জাতিসংঘের বেশ কিছু সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও এটি এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ফিলিস্তিনের ভূপ্রকৃতি পাহাড়, উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী সমতল ভূমি নিয়ে গঠিত। কৃষি, বিশেষ করে জলপাই ও খেজুর উৎপাদন, ফিলিস্তিনের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দখলদারিত্বের কারণে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে।
ফিলিস্তিনের ইতিহাস
ফিলিস্তিনের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। এটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে প্রাচীন কালে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে, যেমন ক্যানানীয়, ফিনিশীয়, ও ইহুদিদের রাজত্ব। খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সালের দিকে এটি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জনগণের আবাসভূমি ছিল।
৭ম শতকে মুসলিম খলিফাদের শাসনে আসে, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি হারিয়ে শরণার্থী হয়ে পড়ে। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ইসরায়েলের দখলে যায়।
আজও ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়নি। পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ করলেও, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেক্ষাপট অত্যন্ত জটিল ও সংকটপূর্ণ। এটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড মূলত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে গঠিত। পশ্চিম তীরের একটি বড় অংশ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত।
গাজা উপত্যকা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছে, কারণ এটি ইসরায়েলি অবরোধের কারণে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। নিয়মিত ইসরায়েলি সামরিক হামলা, খাদ্য ও চিকিৎসা ঘাটতি, বিদ্যুৎ সংকট এবং বেকারত্বের উচ্চ হার ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার এই পরিস্থিতির সমাধানের আহ্বান জানালেও সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ খুব কমই নেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনি জনগণ স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখলেও রাজনৈতিক বিভাজন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর স্বার্থের কারণে এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে। হামাস এবং ফাতাহর মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্যও সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্বের অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে সমর্থন করলেও ইসরায়েল ও তার মিত্রদের কারণে শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনো সম্ভব হয়নি। ফলে ফিলিস্তিনের মানুষ দারিদ্র্য, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক সমাধানের ওপর। ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই প্রধান লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি কার্যকর ভূমিকা নেয়, তবে ফিলিস্তিনের সংকটের একটি সমাধান হতে পারে।
উপসংহার
ফিলিস্তিনের আয়তন এবং ইতিহাস বুঝতে হলে এর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটও বোঝা জরুরি। এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ফিলিস্তিনের জনগণ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে চলেছে, এবং একটি ন্যায়সংগত সমাধান ছাড়া এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি সম্ভব নয়।