বর্তমান সময়ে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসা হচ্ছে লবণের ব্যবসা।নদীর লবণাক্ত পানি দিয়ে উৎপাদিত হয় লবণ। সমতল ভূমিকে চারপাশে মাটির ছোট বাদ দিয়ে তাতে ছোট প্লট আকৃতির জায়গা বানানো হয়। এরপর সেগুলো রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে কালো পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে এখানে লবণ উৎপাদন করা হয়। লবণ উৎপাদনের জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না।
যদি বর্তমানে কেউ লবণের ব্যবসা করতে আগ্রহী হন তাহলে অবশ্যই আমাদের এই আজকের ব্লগটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে আপনি জানতে পারবেন লবণের ব্যবসা কি, লবণের ব্যবসা কিভাবে করতে হয় এবং লবণের ব্যবসা করে সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ কত টাকা প্রয়োজন হতে পারে। এবং লবনের ব্যবসা কতটা লাভজনক।
লবন কী?(What is salt?)
লবণ অথবা নুন হলো এক ধরনের খনিজ পদার্থ। লবন অথবা নুন সোডিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে তৈরি এক প্রকার খনিজ পদার্থ। যা মূলত সমুদ্রের নোনা পানি সূর্যের সাহায্যে অথবা আগুনের তাপে বাষ্পীভূত করে লবণ তৈরি করা হয়। এছাড়াও লবণ অথবা নুনকে প্রাকৃতিক স্ফটিক হেলাইড নামেও ডাকা হয়ে থাকে। সাধারণত সাগরের পানি লবণাক্ত হওয়ার কারণ হলো সমুদ্রের প্রতি ১ লিটার পানিতে প্রায় ৩৫ গ্রাম কঠিন পদার্থের মধ্যে ৫% ই হলো লবন।
লবণ সাধারণভাবে জীবনের জন্য অপরিহার্য খাদ্য তালিকা কত খনিজ সোডিয়াম এবং লবণাক্ততা মানুষের মৌলিক স্বাদের একটি। লবন হল প্রাচীনতম এবং সর্বব্যাপী খাদ্য মসলাগুলোর মধ্যে একটি। এটি অন্যতায় প্রস্তুত খাবার সহ খাবারের স্বাদ উপলব্ধিকে সমানভাবে উন্নত করতে পরিচিত।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি সমুদ্রের নোনা পানি তাপ দিয়ে পানি বাষ্পীভূত করে নুন উৎপাদন করা হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ২০১৯ সালের সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ মিলিয়ন টন লবণ উৎপাদন করা হয়েছে। তবে সমুদ্রের নোনা পানি ছাড়া ও লবণের কিছু পাথরের খনি রয়েছে, যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ আহরণ করা হয়ে থাকে। এবং পরবর্তী সময়ে তা নির্দিষ্ট মূল্যে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
লবনের ব্যবসা কী?(What is the salt business?)
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে লবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদার্থ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত খাদ্য সামগ্রী সঙ্গে লবণ বা নুন মিশে রয়েছে। যেকোনো খাদ্য তৈরিতে লবণের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যে কোনো খাদ্য তে যদি লবনের পরিমাণ কম হয় তাহলে সেই খাদ্যটাই খাওয়ার উপযোগী থাকে না। লবণ ছাড়া যেন সব খাবারই অসস্বাধু লাগে। লবণ ছাড়া কোন খাদ্য পরিপূর্ণ নয়। আর মূলত এই লবণ খাওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লবণের এই ব্যবসা।
সাধারণত লবণ চাষের ভরা মৌসুম ফাল্গুন চৈত্র মাস এবং তা মূলত আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। ফাল্গুন মাসে লবণ চাষ বেশি হয় বলে ফাল্গুন মাসে লবন চাষ বেশি করা হয়। শীতের কুয়াশা লাগানোর জন্য ক্ষতিকর, তাই এ সময়টাতে ব্যবসায় ঝুঁকি দেখা যায়।
বিভিন্ন লবণ আহরণকারী কৃষকেরা বা লবণ চাষিরা সমুদ্র থেকে লবণ আহরণ করে সেগুলো বিভিন্ন পাইকারি বা খুচরা বাজারে বিক্রি করে থাকেন। সেখান থেকে পাইকারি বা খুচরা ক্রয় করে সবার কাছে পৌঁছে দেয় লবণ ব্যবসায়ীরা। বর্তমান সময়ে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের লবণের বাজার বিশাল। আপনি যদি লবণের ব্যবসা করতে চান, তাহলে এই সেক্টরে খুবই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লবণের ব্যবসা কতটা লাভজনক (How profitable is the salt business)
একটি সামুদ্রিক লবণ ব্যবসা করে কত লাভ করতে পারেন? যেহেতু সামুদ্রিক জল উৎসের জন্য বিনামূল্য হয়ে থাকে, সেহেতু একটি সমুদ্রের লবণ ব্যবসা সম্ভাব্য লাভ বেশি। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, সকল কোম্পানি এক কেজি ও পরিশোধিত লবণ কিনে ৭ টাকায়। প্রসেস লস হিসাব করে ১ কেজি পরিশোধিত লবণ উৎপাদনে ১২ টাকার অপরিচিত লবণ লাগে। এরপর অন্যান্য উপকরণ, পরিচালন ও আর্থিক খরচ প্রতি কেজি বেকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণের উৎপাদন খরচ ২৩ টাকা ৩৩ পয়সা। লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে খরচ অত্যন্ত কম এবং লাভ বেশি।
মিল মালিকের মুনাফা এক টাকা ৪৭ পয়সা ও পরিবেশকের লাভ এক টাকা বিশ পয়সা। আর খুচরা বিক্রেতা লবণ কেনেন ২৬ টাকা দরে। মোড়কে লেখা সর্বোচ্চ কুৎসা মূল্য ৩৫ টাকা। এর ফলে খুচরা বিক্রেতা মুনাফার সুযোগ পান কেজিপ্রতি নয় টাকা করে। মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩২ টাকা। এক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতার মুনাফার সুযোগ তাকে কেজিপ্রতি ১২ টাকা চল্লিশ পয়সা। আর সনাতনী পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবনের খুচরা মূল্য লেখা থাকে কেজি প্রতি ২৫ টাকা। বিক্রেতারা কেজিতে মুনাফার সুযোগ পান ১১ টাকার চেয়েও বেশি।
অবশ্য বড়বাজার ও বড় দোকানের সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে কিছু কম দামে বিক্রি করা হয়। তবে পাড়ার মুদি দোকান ও বাকিতে কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যই রাখেন বিক্রেতারা। কোম্পানির কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি মুনাফার সুযোগ পান। তারাই খুচরা মূল্য বেশি লেখেন। তার পেছনেও কারণ অবৈধ আমদানি। সুপরিচিত একটি কোম্পানির একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শিল্প লবনের নামে আনা ভোজ্য লবণ কেজিপ্রতি ১৫ টাকা লাভের সুযোগ দিয়ে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। সবশেষে দেখা যাচ্ছে যে লবণের ব্যবসায়ের সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ভারতে বাশের লবণের ব্যবসা কি লাভজনক (Is the salt business profitable in India?)
বাঁশের লবণ সম্প্রীতি সারা বিশ্বের জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ভারতে। বিশেষ করে জৈব খাদ্য ও সুস্থতা শিল্পে এর স্বতন্ত্র উৎপাদন পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য এগিয়ে আছে। প্রিমিয়াম বাঁশের লবণ তৈরিতে ভারতের দক্ষতা দেশটিকে এই উন্নয়নশীল সেক্টরের অগ্রভাগে রেখেছে।
যা বেসবিপি প্রাকৃতিক পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্য সচেতন পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা দ্বারা চালিত। বাঁশের লবণকে সর্বোত্তম এবং স্বাস্থ্যকর লবণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এটি টক্সিন মুক্ত, উচ্চ ক্ষণিক এবং অত্যন্ত ক্ষারীয়। যা এটিকে অন্যান্য লবনের চেয়ে ভালো করে তোলে। ভারতে বাঁশের লবণের বাজার ২০২৪ থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে ১১.১% চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হারে (CAGR) বৃত্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যা ২০২৪ সালে আনুমানিক USD ৩১.৬ বিলিয়ন থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে USD ৬৪.১ বিলিয়ন হবে। স্বাস্থ্য ও সুস্থতা সম্পর্কে বক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি বাসের লবণের বাজার সম্প্রসারণের একটি প্রধান কারণ। যেহেতু আরও বেশি লোক ঐতিহ্যগত জিনিসগুলির প্রাকৃতিক বিকল্পগুলির জন্য অন্বেষণ করে, সেহেতু বাঁশের লবণ তার একধরনের স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এর অনন্য স্বাদ এবং খনিজ উপাদান এটিকে গূরমেন্ট রান্নার জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলে। ভারত পাশের লবণ উৎপাদনের জন্য খুবই বিখ্যাত। এবং ভারতে বাঁশের লবনের ব্যবসা খুবই লাভজনক।
পরিশেষে, লবণ বা নোন হচ্ছে নিত্যদিনের খাদ্য তালিকার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাবারের বাইরেও ড্রাইং, কাপড় তৈরি, চামড়া শিল্পের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেশে ১৯৬০ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন হয় আসছে। এবার দৈনিক দিন করে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ৩৯ হাজার টন। বর্তমান সময়ে খুব লাভবান ব্যবসায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে এই লবণ ব্যবসা। বিশেষ করে মৌসুমের শুরুতে লবনের দাম বেশি পাওয়া যায়।
এটি উৎপাদন খরচ যেহেতু কম তাই এতে লাভ বেশি হয়ে থাকে। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি লবণ এবং লবণ ব্যবসা এর প্রতি ধারণা পেয়েছেন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।